বিশ্বব্যাপি প্রবাস চিত্র ও বাংলাদেশী প্রবাসী

অক্সফোর্ড  ডিকশনারীতে প্রবাসী/অভিবাসী তথা migrant এর শব্দের অর্থ করা হয়েছে to move from one place to another অর্থাৎ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর হওয়া।এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া।
অভিবাসীর সংজ্ঞায় জাতি সংঘের অধীনে পরিচালিত বিশ্ব মাইগ্রেশন রিপোর্টে ২০১৮ বলা হয়েছে 'প্রবাসী হল সে ব্যাক্তি, যে নিজ দেশ থেকে অন্য দশে পাড়ি জমাই',এই সংজ্ঞায় শর্ট টার্ম ও লংটার্ম ২ ক্যাটাগরিতে প্রবাসীকে ভাগ করা হয়। যারা ৩ মাস বা তার বেশি অবস্থান করে কিন্তু এক বছরের বেশি অবস্থান করে না তারা শর্ট টার্ম। আর যারা একবছরের বেশি অবস্থান তারা লংটার্ম প্রবাসী।
আদিকাল থেকে মানুষ তার প্রয়োজনে স্থান থেকে স্থান, দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছে।প্রবাস জীবনের কারন বের করতে হলে বিশ্বব্যাপি অভিবাসীদের প্রধানত ২ টি ভাগে করা যায় ১ /স্বেচ্ছায় প্রবাস জীবনে যাওয়া, সেটা হতে পারে অর্থনৈতিক কারনে, পেশাগত কারনে, ভ্রমনজনিত কারনে,পড়ালেখার উদ্দেশ্যে,কোন ইভেন্টে অংশ নিতে  ইত্যাদি। ২ /বাধ্য হয়ে প্রবাসী হওয়া , যেমন যুদ্ধের কারনে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে,দুর্ভীক্ষজনিত কারনে, জাতিগত, সংখ্যালঘু বা ধর্মীয় ব্যাপারে নির্যাতনের কারনে প্রভৃতি।
২০১৮ সালের জাতি সংঘের আওতাধীন ওয়ার্ল্ড মাইগ্রেশন রিপোট অনুযায়ী ২৪৪ মিলিয়ন মানুষ পুরো বিশ্বে প্রবাসী জীবন যাপন করে,যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩.৩ %।এশিয়া এবং ইউরোপে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী ২০১৫ রিপোর্ট অনুসারে ৭৫ মিলিয়ন যা মোট হিসাবের ৬২ %।প্রবাসী কর্মী আছে ১৫০.৩ মিলিয়ন। উচ্ছ আয়ের দেশে ১২৩ মিলিয়ন।৩৪.৪ মিলিয়ন  মধ্য আয়ের দেশে এবং ২%নিম্ন আয়ের দেশে।

 বিশ্বব্যাপি শরনার্থী আছে, জাতি সংঘের অয়াওতাধীন প্রতিষ্ঠান UNHCR এর তথ্য মতে ৬৮.৫ মিলিয়ন।এর মধ্যে রাজনৈতিক আশ্রই প্রার্থী আছে ৩.১ মিলিয়ন।শুধুমাত্র তুরস্কে আছে প্রায় ৩.৬ মিলিয়ন।জার্মানিতে সিরিয়ান আছে প্রায় ৬০০০০০জন।অন্যান্য দেশের আছে উল্লেখ যোগ্য প
।এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে,পাকিস্তান, মালয়েশিয়া ওইউরোপের বিভিন্ন সহ বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে এসব এসব শরণার্থী।বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ২০১৭ থেকে প্রায় ৭৭১,০০০ রোহিংগা।

বাংলাদেশী প্রবাসী কত সে বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য রয়েছে। সমকালে  প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে ৭০ লাখ।বস্তুত এই সংখ্যা প্রায় এক কোটি, যা সরকারী তথ্যমতে ১৫৯ টি দেশে অবস্থান করছে।সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশী রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে প্রায় ২৮ লাখ রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলুতে।তম্মধ্যে সৌদি প্রায় ১২  লাখ,কোন কোন পত্রিকায় এসেছে ২০ লাখ অবৈধ অবস্থান কারী সহ,আরব আমিরাতে ৭-৮ লাখ,২০১৬ পর্যন্ত কুয়েতে ৫ লাখ ৫ হাজার ৪৭ বি এ এম ই টি তথ্য মতে।এছাড়া বাহরাইন ও  কাতারেও উল্লেখ যোগ্য পরিমান প্রবাসী অবস্থান করছে।যুক্তরাজ্যে ২০০৯ সালের তথ্যমতে ৫০০০০০ জন।যুক্তরাষ্ট্রেও বিভিন্ন স্টেটে উল্লেখ যোগ্য পরিমান প্রবাসী বাংলাদেশী রয়েছে।মোট ১৫৯ দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশ প্রবাস জীবন যাপন করছে।

প্রবাসিরা দেশের প্রতিটি কর্মকান্ডে অবদান রাখে বিভিন্ন ভাবে।  শিক্ষা,সাহিত্যে যেমন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠা করা,প্রবাসে থেকেও সাহিত্য চর্চা করা।উন্নয়ন কর্মকান্ডে যেমন ব্যাবসা বানিজ্য গড়ে তোলা,মিল কারখানা প্রতিষ্ঠা করা আমদানী রপ্তানী করে আন্তর্দেশীয় বানিজ্যের পরিধি বৃদ্ধি করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা,দেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রভৃতি। সবচেয়ে বেশি যেই সেক্টরে অবদান রাখে তা হল রেমিটেন্সে। গত বছরে বিডি নিউজ এর তথ্যমতে ২০১৮ -২০১৯ অর্থবছরের রেমিটেন্স  ছিল প্রথম সাত মাসে( জুলাই -জানুয়ারী) প্রায় ৯.০৮ বিলিয়ন ডলার।২০১৭-২০১৮ সালে ছিল রেমিটেন্স এসেছে ৮.৩১ বিলিয়ন ডলার।
জিডিপিতে রেমিটেন্সের অবদান ১২%।

জাতিসংঘের অধিনে পরিচালিত বিশ্ব অভিবাসী রিপোর্ট ২০১৫ অনুযায়ী বাংলাদেশ ৯ম তম রেমিটেন্স গ্রহনকারী দেশ।প্রথম আলোর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২১.৮৫ শতাংশ যা দক্ষিন এশিয়ায় সর্বোচ্চ।প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশের পাশাপাশি বিদেশেও অবদান রাখছে। ব্রিটিশ সংসদে ৩ বাংলাদেশী এম পি সহ অসংখ্য প্রবাসী বিভিন্ন সেক্টরে সফল।বলা যায় নিজ দেশ ও অবস্থান রত দুই দেশের অর্থনীতিতেই প্রবাসিরা অবদান রেখে চলছে। প্রবাসিদের সমস্যা ও অনেক রয়েছে।যেমন প্রবাসে মৃত্যুর হার বাড়ছে।তার অন্যতম কারণ একই রুমে গাদাগাদি অবস্থান করা তথা প্রবাসী অনিরাপদ আবাসন।কারণ রুমে আগুন দুর্ঘটনায় অনেকেই মারা গেছে সৌদি আরবে।
 ২০১৩ সালেই ৩০৭৫ জন বি বি সির তথ্য মতে।

বাড়ছে প্রবাসে নারী নির্যাতনের মাত্রা,বিশেষ করে সৌদি আরবে গৃহকর্মী নির্যাতন বাড়ছে।টি আই বির হিসাব মতে ২০১৮ সালের জুন মাসেই নির্যাতিত মহিলা ফিরেছে ১২০জন।এর আগের ৬ মাসে ২৬০ জন।এছাড়াও বিমান বন্দরে হয়রানি,ভিসা নিয়ে প্রতারক চক্রের প্রতারণা প্রভৃতি।এসব সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে সরকারের উচিৎ প্রবাসী বান্ধব নীতি প্রনয়ন ও সেগুলুর বাস্তবায়ন, যাতে প্রবাসিরা জাতীয় উন্নয়নে অবদানকে আরো ত্বরান্বিত করতে পারে।

আবদুস শাকুর, (শারজাহ, আরব আমিরাত)
সাংস্কৃতিক সম্পাদক, প্রবাসী সাংবাদিক সমিতি (সংযুক্ত আরব আমিরাত)
তথ্য সূত্র-বিবিসি,মাইগ্রেশন রিপোর্ট, ইউনিসেফ রিপোর্ট,UNHCR রিপোর্ট,প্রথম আলো,সমকাল, বিডি নিউ 

No comments:

Post a Comment

সর্বশেষ পোস্ট

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইসচার্চে ২টি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা, হতাহত অনেক।

নিউজিল্যান্ডে ২টি  মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা, হতাহত অনেক। কোন কোন পত্রিকায় ২৭ জন নিহত হয়েছে বলে তথ্য এসেছে।নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দু...